এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥
মুরগি বিক্রেতা থেকে শত কোটি টাকার মালিক রামুর পূর্ব গোয়ালিয়াপালং এলাকার মোস্তাক আহমদ ওরফে ইয়াবা মোস্তাক একটি সংস্থার সোর্স দাবি করে বহাল তবিয়তে থেকে গেছে এখনও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি তালিকায় তার নাম শীর্ষে রয়েছে বলে জানা গেছে। মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধী (পলাতক) মৌলবি জাকারিয়ার পুত্র সালাহ উদ্দিন ইয়াবা কারবার করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের বাড়িঘরে ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চালানো হয়নি অভিযান। জানা গেছে, পূর্ব গোয়ালিয়াপালং এলাকার কাঠুরিয়া আশরাফ মিয়ার পুত্র মোস্তাক আহমদ ওরফে ইয়াবা মোস্তাক তার সহোদর মানব পাচারকারী মনসুরের সঙ্গে মুরগি কেনাবেচা করতে। অভাবের সংসার মনসুর গ্রামে গ্রামে ঘুরে মুরগি কিনে মোস্তাককে সঙ্গে নিয়ে তা বাজারে বিক্রি করত। এক সময় মোস্তাক আনসার সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সখ্য গড়ে তোলে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে। বিভিন্নস্থানে ঘুরে ইয়াবা সরবরাহের গোপন সংবাদ দিতো মোস্তাক। অল্প টাকার বেতনে আনসারের চাকরিতে বেশিদিন থাকেননি। চাকরি ছেড়ে উখিয়ার মরিচ্যা এলাকায় শুরু করেন মিয়ানমারের চোরাই পণ্যের ব্যবসা। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা কারবারে।
এ দিকে মাল জব্দের পর ওই সংস্থার কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা মোস্তাকের মাধ্যমে বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারা করতেন বলে জানা গেছে। জব্দকৃত পণ্য বিক্রির পাশাপাশি মোস্তাক নিজেই ইয়াবার চালান আনা শুরু করে মিয়ানমার থেকে। আলাদ্দীনের চেরাগ পাবার মতো অল্পদিনেই মোস্তাক কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। গেলবার ইউপি নির্বাচনে মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। চলাফেরা করেন ক্ষমতাশীন দলের ধান্ধাবাজ নেতাদের সঙ্গে। সূত্র জানায়, হ্নীলার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী কয়েক বছর ক্রসফায়ারে নিহত নুর মোহাম্মদের হাত ধরে মোস্তাক ইয়াবা জগতে পা দেন। পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নূর মোহাম্মদ নিহত হওয়ার পর ওই সিন্ডিকেট ছেড়ে নিজেই ইয়াবা সরবরাহে শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যেই রুটে চেকপোস্ট নেই, সে রুটে (উপসড়ক) লাখ লাখ পিস ইয়াবা চালান এনেছে ওই মোস্তাক। সম্প্রতি মোস্তাকের সিন্ডিকেটের এক সদস্য বিপুল ইয়াবা নিয়ে বাইশারি ফাঁড়ির পুলিশের হাতে আটকও হয়েছে। মোস্তাকের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের ৫টি মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন। সর্বশেষ ডিবি পুলিশ ১০ হাজার ইয়াবাসহ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয়রা জানান, বিশাল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া রামু খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাক আহম্মদ মোস্তাকের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার পেছনে রয়েছে শুধু ইয়াবা কারবার। এ জন্য পূর্ব গোয়ালিয়াপালং এলাকার এই ব্যক্তিকে সবাই ইয়াবা মোস্তাক নামেই চেনে। বছর তিনেক আগেও খেয়ে না খেয়ে জীবন গেছে মোস্তাকদের। কিন্তু ইয়াবা ভাগ্যে তিনি এখন এলাকার অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি। কোটি কোটি টাকার সঙ্গে আছে অঢেল সম্পত্তিও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোস্তাক সিন্ডিকেট সবচেয়ে বেশি ইয়াবা পাচার করে সাগর পথে। তারা দুই সহোদরের একজন মনসুর মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী আর মোস্তাক হচ্ছে ইয়াবা বেপারী। সাগর পথে মানব বহন ও ফিরতি পথে ইয়াবা আনার জন্য মোস্তাকের মালিকানাধীন কয়েকটি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। ওই ট্রলারগুলো দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বহন করে ইনানীর রেজু খালের মোহনায় আনা হয়। পরে সেখানে নতুবা গহিরা-আনোয়ারা, বাঁশখালী ঘাটে খালাস হয় ইয়াবার চালান। ইয়াবার টাকায় মোস্তাক গোয়ালিয়া পালং এলাকায় ২০ কোটি টাকার জমি কেনা, তিনটি স মিলের মালিক ছাড়াও কুঁড়েঘর ভেঙ্গে সুরম্য অট্টালিকায় পরিণত করেছেন। এ ছাড়াও ইয়াবা কারবারে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে ট্রাক, মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিক্সার ব্যবসা রয়েছে।
এ দিকে মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধী (পলাতক) মৌলবি জাকারিয়ার পুত্র ইয়াবা ডন সালাহ উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ বাদশা, তার সহোদর আবদুল গফুরদের ইয়াবা তৎপরতা এখনও থামেনি। অভিযান চলাকালেও আকিয়াব থেকে ফিশিং ট্রলার যোগে সালাহ উদ্দিন-গফুর সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান মহেশখালীতে আসছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে রাজাকারপুত্র জাকারিয়া মৌলবির পুত্র সালাহউদ্দিনের প্রায় ৬ লাখ পিস ইয়াবা ছিনতাই করেছিল গফুর সিন্ডিকেট। পরবর্তীতে দু’গ্রুপে টানাটানি ঝামেলা না করে দুটি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে একত্রিত হয়ে মহেশখালীতে ইয়াবা কারবার চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধী (পলাতক) মৌলবি জাকারিয়ার পুত্র সালাহ উদ্দিন বিপুল ইয়াবাসহ আটক হয়েছিল ঢাকা শাহবাগ থানায়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের জোরে সোরে নেমে পড়ে ইয়াবা কারবারে। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ রবিবার বলেন, ওই মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধী (পলাতক) মৌলবি জাকারিয়ার পুত্র সালাহ উদ্দিনকে ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। জনকন্ঠ
পাঠকের মতামত: